Skip to main content

ঢাকা শহরের নদীগুলোর রক্ষা সুফলগুলো (৫ম ও শেষ পর্ব)

আমরা যদি বিশ্বে মানচিত্রের দিকে তাকাই তবে দেখব বিশ্বের সব গুরুত্বপূণ শহরগুলো নদী কিংবা সমুদ্রের তীর অবস্থিত। আমরা যদি এবার ইতিহাসে দিকে তাকাই তবে দেখব সেসব শহরের পাশে নদী আছে সেই সব শহরগুলো অন্য শহরগুলোর চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ এটা যোগাযোগ কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ উভয়ের দিক থেকে। একটি সুন্দর নদী একটি শহরকে তথা একটি দেশকে পাল্টে দিতে পারে। পরিবেশ রক্ষা,জাতীয় উন্নয়ন, ও আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢাকা শহরের নদীগুলো স্বাভাবিক হলে কী ও কতটা ভূমিকা রাখতে পারে তা আমার আলোচনার এ পর্বে তুলে ধরব।


১. নদী বাচলে বাচবে জীবন:
নদী ধ্বংসের ফলাফল আমরা দেখেছি নদী ধ্বংসের ফলাফল মানুষের জীবননাশের কারণ হতে পারে। নদী ধ্বংস, রোগ জীবানু থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দূযোগের কারণ হতে পারে। তাই নদীকে নদীর স্বাভাবিক রূপ দিতে হবে। ফলে নদী বাচবে, বাচবে মানুষের জীবনও। অথবা দিনদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যাবে। তাই জীবন রক্ষার জন্য হলেও নদী রক্ষা প্রয়োজন।

২. পরিবেশ রক্ষা:
বতমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ও গুরুত্বপূন বিষয় হল পরিবেশ রক্ষা করা। পরিবেশ রক্ষা না করলে তা প্রভাব অথনীতি ও সমাজে প্রভাব। আর পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান খুবই ব্যাপক। কোন দেশের ৫ বছরের জাতীয় আয় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হলে যেতে পারে। হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। মানুষ নতুন নতুন সমস্যায় পড়ে। প্রাকৃতিক দূযোগকে এখন অনেক প্রধান্য দেওয়া হয়। কারণ ভূমিকম্প কিংবা সুনামী কি করতে পারে তা সবার জানা তাই পরিবেশ কিংবা নদীকে তাদের মত করে থাকতে দিলে মানুষই লাভ।

৩. অথনৈতিকভাবে লাভবান:
নদী অন্যতম অথনৈতিক কাজের একটি ক্ষেত্র। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অনেক পেশা ও শিল্প। নদী স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেলে এখানে নৌকায় মানুষ চলাচল করবে ফলে মাঝিদের জীবিকার ব্যবস্থা হবে। নদী গভীর হলে নদীর পানি বিশুদ্ধ ও নদীতে মাছের খাবার থাকলে নদীগুলো মাছ পাওয়া যাবে। ফলে এখান জেলেদের পেশার কাজ সৃষ্টি হবে। নদী যদি প্রশস্ত হয় তবে বড় লঞ্চ ও জাহাজগুলো নদী দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারবে। বুড়িগঙ্গার পানি ও পরিবেশ সুন্দর হলে এখানে দেশী বিদেশী পযটক আসবে। আবার মালামাল নেওয়া কিংবা বের করাও সহজ হবে যদি নদীগুলোকে স্বাভাবিক রূপ দেওয়া যায়।

 ৪. বিনোদনক্ষেত্র:
নদীকে কেন্দ্র করে বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যম গড়ে ওঠে। কিন্তু এজন্য চাই নদীর স্বাভাবিক ও সুন্দর পরিবেশ। যেমন. শখের মাছ ধরার বিষয়, কিংবা ছোট ছোট নৌকায় ভ্রমণ। কিংবা বড় বড় জাহাজে ভ্রমন হতে পারে। এছাড়া সাতার কাটার ব্যবস্থা থাকতে পারে। নদী পাড়ে পার্কের ব্যবস্থা থাকলে মানুষ শীত কিংবা গরমে নদী পাড়ে সময় অতিবাহিত করতে পারে। অসুস্থ মানুষ ফ্রেশ বাতাসের জন্য নদী কাছে আসতে পারে।

৫. খাদ্য চাহিদা পূরণ:
নদীতে মাছ পাওয়া গেলে তা আমাদের আমিষের অভাব পূরণ করতে পারে। নদীর পানি বিশুদ্ধ হলে সেই পানি পানও করা যেতে পারে। শীতলক্ষ্যার পানি এক সময় খুবই সুপেয় ছিল। নদীগুলোর চারপাশে ফলের বিভিন্ন গাছ লাগানো যেতে পারে। ফলে এগুলোর মাধ্যমে খাদ্যের সংকট দূর হতে পারে।

৬. ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দূর:
ঢাকার আশেপাশের নদীগুলো রক্ষা করতে না পারলে ঢাকা শহরের জলবদ্ধতা দূর হবে না। তাই ঢাকা শহরের উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। কারণ না হলে ঢাকা শহরে পুরোপুরি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।

৭.ঢাকা শহরের দুগন্ধ ও ময়লা কমে যাবে:
ঢাকা শহরে চারিদিকে ময়লা আবজনা। এসব থেকে ছড়ায় নোংরা দুগন্ধ। এসব বন্ধ করতে হলে আমাদের নদীসহ অন্যান্য জলাশয়কে দূষণমুক্ত করতে হবে। ময়লা আবজনা নদীতে না ফেলে যথাযথ স্থানে ফেলা। নদী পাড়ের এলাকাগুলো দেখলে মায়া লাগে। তাই নদী রক্ষা করে এসব বিষয়ও নিশ্চিত করা।

৮. বায়ু দূষণ কমানো:
বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ নদী দূষন। নদীর পানি দুগন্ধ হলে তা বাতাসে মিশে। আর নদী পাড়ের ময়লা ও ধূলাবালিও বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে। ফলে নদী দূষণ বন্ধ হলে বায়ু দূষনও কমে যাবে।

৯.রোগ জীবানু হ্রাস:
পানি দূষণ থেকে বিভিন্ন ধরণের রোগ জীবানু ছড়ায়। পানি নোংরা ও দূষিত হলে এটা হয়। তাই রোগ জীবানু কমাতে হলে পানি দূষণ তথা নদীকে রক্ষা করতে হবে।

৫ পর্বের এই আলোচনা শেষে বলা যায়, বাংলাদেশে নদীমাতৃক দেশ। নদী একটি দেশের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু আমরা এই সম্পদকে ধ্বংস করছি। কখনও বুঝে কখনও না বুঝে। কিন্তু বতমানে নদীগুলো অবস্থা খুবই খারাপ। দিনদিন আর খারাপ দিকে যাচ্ছে। কিন্তু মিডিয়া, সরকার কিংবা অন্য কারও তেমন মাথা ব্যাথা নেই। দায় সাড়া বিভিন্ন বক্তব্য ও প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তা বাস্তব সমস্যা থেকে অনেক দূরে। কিন্তু নদীগুলোকে রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে এর ফলাফল খুবই খারাপ হবে। কয়েক বছর ধরে নিষ্প্রাণ নদীকে কষ্ট দেবার প্রতিশোধ নদী যে কোন মুহূর্তে নিবে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধান হওয়া দরকার। নদীগুলোকে রক্ষায় এগিয়ে যাবা দরকার। নদীগুলো আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া আমাদের সকলের কতব্য। তাই উপরের আলোচনা থেকে যেসব সমাধানের কথা বলা হয়েছে সরকার কিংবা কতৃপক্ষে তা দ্রুত গ্রহণ করবে। আর নদীকে রক্ষা করতে পারলে তা আমাদের জাতীয় অথনীতিতে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জীবনকে নদী রক্ষা করে সুন্দর করতে পারি আবার নদীকে ধ্বংস করে আমাদের জীবন বিপদের মুখেও ফেলে দিতে পারি। আমরা জেনে শুনে সম্ভবত নদী ধ্বংস করতে চাই না।

তাই আমার ব্লগের লেখাগুলো যে পড়বেন প্রত্যেককে আহবান জানাবে যে, যে যে পেশার সাথে জড়িত সে তার জায়গা থেকে নদী রক্ষায় সচেতন হবে, কাজ করবে এবং অন্যদের সচেতন করবে। আর যদি প্রয়োজন তবে আন্দোলনেও শরিক হবে। কারণ সকলে জেগে উঠলে নদীগুলো জেগে উঠতে পারবে তা নিজস্ব গতিতে। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকে আমাদের জায়গা থেকে আমাদের দায়িত্বগুলো পালন করি। অন্যের উপর দোষ না চাপাই। জয় হোক ঢাকা শহরের নদীগুলো, জয় হোক পরিবেশের। আর আমরা আলোচনার একদম শেষে বলতে চাই, আসলেই আমার নদী মানেই আমার জীবন।



শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Comments

Popular posts from this blog

ঢাকা শহরের নদী দূষণের ফলাফল (৩য় পর্ব)

আমাদের ঢাকা শহরের চারদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত। বিশ্বে এমন রাজধানী বিরল। এক সময় ঢাকা শহরে ছিল পরিবেশ বন্ধব। অনেক গাছপালা ছিল আর ঢাকা শহরের ভিতরের ছোট ছোট খালগুলো ছিল দূষণমুক্ত। মানুষ আরামে বসবাস করতে পারত। বর্তমানে সেই নদীগুলোকে ধ্বংস হয়ে গেছে কিন্তু প্রাণহীন এই নদীগুলো ধ্বংস হলে আমাদের কি কোন ক্ষতি হবে না? নদীগুলো হত্যা করে আমরা কি শান্তিতে বাচতে পারব? না, নদীগুলো ধ্বংস করে আমরা শান্তিতে বাচাতে পারব না। কারণ এই নদীগুলো ছিল আমাদের জীবনকে সুন্দর করার অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। এই সম্পদ না থাকলে বা বিপন্ন হলে মানব জীবনে ও পরিবেশের উপর এর ফলাফল কি হবে পারে তাই আমরা এ পর্বে আলোচনা করব।

ঢাকা শহরের নদীগুলোর অবস্থা (১ম পর্ব)

ভূমিকা:  ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। মাত্র ৫৯০ বর্গ মাইলের ছোট্ট এই শহরে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। এই শহরকে কেন্দ্র করে জীবন জীবিকার জন্য প্রতিদিন গড়ে ১০,০০০ মানুষ শহরে আসা যাওয়া করে। আর বাংলাদেশের সব কিছু প্রানকেন্দ্র ঢাকা শহর। তাই প্রতিনিয়তই গ্রাম থেকে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। এভাবেই দিনদিন ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বেড়ে চলছে। ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ঘন বসতিপূর্ণ রাজধানী। বিরামহীনভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এক কালের সুন্দর ঢাকা শহর আজ পরিনত হয়েছে অপরিকল্পিত ও দূষণের নগরী হিসেবে পরিচিত। ঢাকা শহর এখন বিশ্বের অন্যতম অনুপযোগী শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যেভিক্তিক আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের ‘বৈশ্বিক বসবাস উপযোগিতা’ শীর্ষক এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অযোগ্য শহর হল ঢাকা।