By
DestroyWatch
আমাদের
ঢাকা শহরের চারদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত। বিশ্বে এমন রাজধানী বিরল। এক সময় ঢাকা শহরে
ছিল পরিবেশ বন্ধব। অনেক গাছপালা ছিল আর ঢাকা শহরের ভিতরের ছোট ছোট খালগুলো ছিল দূষণমুক্ত।
মানুষ আরামে বসবাস করতে পারত। বর্তমানে সেই নদীগুলোকে ধ্বংস হয়ে গেছে কিন্তু প্রাণহীন
এই নদীগুলো ধ্বংস হলে আমাদের কি কোন ক্ষতি হবে না? নদীগুলো হত্যা করে আমরা কি শান্তিতে
বাচতে পারব? না, নদীগুলো ধ্বংস করে আমরা শান্তিতে বাচাতে পারব না। কারণ এই নদীগুলো
ছিল আমাদের জীবনকে সুন্দর করার অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। এই সম্পদ না থাকলে বা বিপন্ন
হলে মানব জীবনে ও পরিবেশের উপর এর ফলাফল কি হবে পারে তাই আমরা এ পর্বে আলোচনা করব।
১.
ঢাকা শহরে জলবদ্ধতার সৃষ্টি:
ঢাকা
শহরের আশেপাশের নদীগুলো ভরাট করা হচ্ছে। প্রতিদিনই কমছে নদী দৈর্ঘ্য। আর নাব্যতা সংকট
এখন অন্যতম সমস্যা। বছরে অন্তত একবার ড্রেজিং করা না হলে বড়িগঙ্গা দিয়ে লঞ্চ চলতে পারে
না। নদীর পানি ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের প্রিয় ঢাকা শহরে। ভারি
বৃষ্টি হলে কিংবা বর্ষার দিনে ঢাকা শহরে চলাচল করতে নৌকা লাগে। কারণ প্রধান সড়কগুলোতেই
কোমড়ের উপরে পানি থাকে। এমন চিত্র তো আগে ছিল না। এমন কেন হল? কারণ হল ঢাকা শহরের নাব্যতা
ও পানির প্রভাব কমে গেছে তাই বর্ষার পানি দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হয় না। আর নদীতে নব্যতা
কম থাকায় পানি ধারণ ক্ষমতা কম ফলে বৃষ্টির পানি ঢাকা শহরের ড্রেনগুলো অতিক্রম করে রাস্তার
এসে পড়ে। এভাবে গত কয়েক বছর ধরে এই সমস্যাটি চলেছে। সবচেয়ে বিপদের বিষয় হল ঢাকা শহরের
এই জলবদ্ধতার সংকট দিনদিন বাড়ছে। এর ফলে মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক ধরণের
দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ মারাও যাচ্ছে।
২.
ঢাকা শহরের ভিতরের খালগুলো ভরাট:
ঢাকা
শহরের নদীগুলো শাখা নদীগুলো শহরের ভিতর দিয়ে ছোট হয়ে চলে গেছে এগুলো হল ঢাকা শহরের
খাল। এসব খালগুলো ভরাট করে এমনভাবে দালান উঠানো হয়েছে যে খালগুলো এখন শুধু ইতিহাস।
খুজলেও বেশির ভাগ খালের সন্ধান পাওয়া যাবে না। বালু দিয়ে ভরাট করে এসব খালের উপর দালান
উঠানো হয়েছে ফলে এই সব এলাকার দালানগুলো সবচেয়ে ভূমিকম্পের ঝুকিতে আছে। খালগুলো ভরাট
করতে পেরেছে কারণ আশেপাশের নদীগুলোর সরু হওয়া এসব খালের পানি কমে গেছে আর ময়লা ফেলতে
ফেলতে খালের অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে ফলে দখলদারীরা খালগুলো ভরাট করে ভাগ করে নিয়েছে।
৩.
বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগবে:
ঢাকা
শহরের মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি নেই। পানি এমন
একটা জিনিস যা সবারই দরকার। কারণ আশেপাশে নদীর পানি কোন কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না
ফলে কৃত্রিম পানির উপর আমাদের সব চাহিদা মেটানোর জন্য নির্ভরশীল করতে হচ্ছে। আর কৃত্রিম
বা ঔষুধের মাধ্যমে তৈরি পানির মানও ভাল না। আমরা যদি নদীর পানিকে এত বেশি নোংরা ও দূষিত
না করতাম না হলে আমাদের বিশুদ্ধ পানির সমস্যা অনেকটাই কমে যেত।
৪.
নদীর পানি ব্যবহার করা অনুপযুক্ত হবে:
বুড়িগঙ্গা
নদীতে এক সময় মানুষ গোসল করত। রান্না কাজে তুরাগ ও বালু নদীর পানি ব্যবহার করত। আর
শীতলক্ষ্যার পানি মানুষ পানও করত। কিন্তু উপরের সব কথাগুলো এখন অতীত। বর্তমানে বুড়িগঙ্গায়
এখন কেউ গোসল করে না। গোসল করে না বললে ভুল হবে কারণ যাদের অন্য কোথায়ও যাবার জায়গা
নেই তারা কান চোখ বন্ধ করে বাধ্য হয়ে গোসল করে। আর তুরাগ ও বালু নদীর পানি এখন আর রান্নার
কাজে ব্যবহৃত হয় না। আর শীতলক্ষ্যার সেই বিশুদ্ধ পানি এখন আর নেই। শিল্প কারখানার বর্জ্য
পদার্থ ফেলতে ফেলতে নদীর পানি এখন বিষ হয়ে গেছে।
৫.
নদী থাকা মাছ ও অন্যান্য প্রানী মরে যাবে:
বাংলাদেশের
জনসংখ্যা বেশি তাই সব মানুষকে কাজ দেওয়া এখানে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। কিন্তু এখানে
কাজের ক্ষেত্রগুলো নষ্ট করতে সবাই তৎপর। মাছে ভাতে বাঙ্গালী নামে একটি প্রবাদ আছে।
মাছের সাথে জেলেদের পেশার সম্পর্ক আছে। ঢাকা শহরের সব নদীতেই মাছ পাওয়া যেত আর তাকে
কেন্দ্র করে অনেক কর্মক্ষেত্রও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু নদী দূষণের কারণে সেসব পেশার মানুষ
আজ বেকার। কারণ নদীর পানি এতই বিষাক্ত ও নোংরা এখানে মাছের বসবাস সম্ভব নয়। এত প্রভাব
আমাদের বাস্তুসংস্থানেও পড়ছে। নদীকে কেন্দ্র করে অনেক প্রানী ও পাখি বসবাস করে সেসব
প্রানী ও পাখি আজ আমরা দেখি না।
৬.
ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ বেড়ে যাবে:
পানির
সাথে বায়ু দূষনের বিষয়টি জড়িত। কারণ পানি বিশুদ্ধ থাকলে ও সহজলভ্য হলে বায়ুতে ব্যাটেরিয়া
ও জীবানুর পরিমান কম থাকে। কিন্তু ঢাকা শহরের পানিই বরং বায়ুর চেয়ে দূষিত। তার ফলে
শহরের বায়ু আরও বেশি দূষিত হচ্ছে। নদীর পানি রোগ জীবানু, দুগন্ধ, ভাইরাগ বায়ু মাধ্যমে
আশেপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে ফ্রেশ বাতাসের পরিমান কমে গেছে।
৭.
রোগ জীবানু বেড়ে যাবে:
নোংরা
পরিবেশ থেকে রোগ জীবানুর জন্ম হয়। ঢাকা শহরের আশেপাশে নদী বিশেষ করে বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী
এলাকাগুলোর মানুষগুলো বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগে। কামরাঙ্গীচর এলাকায় এসব রোগের পরিমান
বেশি গবেষনার উঠে এসেছে। এর প্রবাহ আশাপাশের এলাকাকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। মশাবাহিত রোগগুলো
এসব নদীগুলো নোংরা থাকার জন্য অনেকটা দায়ী।
৮.
পরিবেশের স্বাভাবিক রূপ হারাচ্ছে:
নির্মল
বাতাস থাকবে নদী বুকে, গরমে মানুষ নদীর পানিতে গোসল করবে। মানুষ নদীর বুকে নৌকায় ঘুরে
বেড়াবে। কিন্তু স্বাভাবিক এই পরিবেশ এখন আর নেই। কারণ নদীর পানি দূষিত হয়ে এতই খারাপ
পর্যায়ে গেছে যে মানুষ নদীর কাছে যেতে বিরক্তি বোধ করে।
৯.
নৌযান চলাচলে সমস্যা:
নদীগুলো
নাব্যতা ও দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে নদীগুলো যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। তুরাগ ও বালু
নদী দিয়ে বড় নৌযান চলাচল বন্ধ আর বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যায় ড্রেজিং না করা হলে নৌ চলাচলের
সমস্যা হয়। এই সমস্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
১০.
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
প্রকৃতির
স্বাভাবিক ভারসম্য নষ্ট করা হলে তার জবাব প্রকৃতি ভালভাবেই দেয়। ঢাকা শহরের নদীগুলোতে
পানি পরিমান কমে যাওয়ায় ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির লেভেল আরও নিচে চলে যাচ্ছে। ফলে
ঢাকা শহরে গরমের দিন গরম ও শীতের দিনে শীত বাড়ছে। সবচেয়ে বিপদের কথা হচ্ছে ঢাকা শহরের
ভূগর্ভস্থ পানি নিচে যাওয়ায় ভূগর্ভে তাপমাত্রার পরিমান বাড়ছে আর এটা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশেই
হতে পারে বড় ধরণের ভূমিকম্পের কেন্দ্র।
এছাড়াও
আর অনেক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলাফল আছে। তবে উপরের বিষয়গুলোই বড় ধরণের ফলাফলের ক্ষেত্রসমূহ।
আগামী পর্বে ঢাকা শহরের নদীগুলোর এই করুণ দশা প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চলবে...
- Get link
- Other Apps
Labels
নদী দূষণের ফলাফল
Labels:
নদী দূষণের ফলাফল
- Get link
- Other Apps
Comments
Post a Comment